Posts

Showing posts from April, 2025

দীপ্তি-তিমির আলয় (পর্ব ২) - ডঃ অসিত কুমার মাইতি

Image
  পর্ব ২: মাটির চৌকিতে বসে স্বপ্ন বোনা   বাবার মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরা সহজ ছিল না। মা ভোরবেলা অন্যের বাড়ি রান্না করে আসতেন, আর সনাতন সকালে গিয়ে মাঠে বীজ ছিটিয়ে আসত। তারপর দুপুর গড়িয়ে বিকেল, যেখানে তার সবচেয়ে প্রিয় কাজ—ছবি আঁকা। কিন্তু এখন আর সময় নেই শুধু নিজের জন্য আঁকার। পেটে ভাত না থাকলে, তুলি তুলে আকাশ আঁকা যায় না। তাই একদিন সনাতন সিদ্ধান্ত নিল, “আমি শেখাব। যারা চায়, তাদের আঁকতে শেখাব।” প্রথম ছাত্রী এল পাশের বাড়ির রেনু—মাত্র ছয় বছরের মেয়ে, কাগজে গোল গোল দাগ কাটে, তারপর সেগুলোকে পাখির চোখ বানায়।   সনাতন তাকিয়ে হেসে বলে, “তুই পাখি আঁকিস না, তুই তো আকাশ আঁকিস!”   সেই শুরু। দিনে দিনে ২ থেকে ৪, ৪ থেকে ৭… ছেলেমেয়েরা আসতে লাগল। কেউ বলত—“আমরা স্কুলে যাই না স্যার”, কেউ বলত—“বই ভাল্লাগে না”, কিন্তু সনাতনের আঁকার ক্লাসে তারা নীরবে তুলি চালাত।   প্রথমে উঠোনে হতো ক্লাস। বটগাছের ছায়ায় কাঁথা বিছিয়ে চলত চিত্রকলা। তাদের টুল ছিল ইট, খাতা ছিল পুরনো খাতা, রঙ ছিল কাঠের বাক্সে রাখা কিশোর কাগজের চিত্রতুলির গুঁড়ো।   একদিন এক ছাত্র বলল, “স্যার, আমাদের এই স...

দীপ্তি-তিমির আলয় (পর্ব ১) - ডঃ অসিত কুমার মাইতি

Image
পর্ব ১: কাদায় মিশে থাকা ক্যানভাস “ও চোখ দিয়ে আঁকে, হাত দিয়ে নয়।’’ ধনীবাঁধ গ্রামের আকাশটাও যেন অন্যরকম ছিল। কখনো থমথমে, কখনো ধু-ধু। কিন্তু ছোট্ট সনাতন ঘোষ সেই আকাশের নিচে অন্য এক পৃথিবী খুঁজত। তার বয়স যখন আট, তখন তাকে পাওয়া যেত পুকুরের পাড়ে, যেখানে সে লতাপাতা, মাটি, ছেঁড়া কাগজ দিয়ে কিছু না কিছু আঁকত। কেউ একে খেলা ভাবত, কেউ "বোকামো" বলত। কিন্তু মা বলতেন, “ও চোখ দিয়ে আঁকে, হাত দিয়ে নয়।’’ বাবা ছিলেন সহজ মানুষ। ভোরে মাঠে যেতেন, সন্ধ্যায় ফিরতেন নীরব হয়ে। সংসার চলত খড়ের চাল, একটা ভাঙা চৌকি আর ঝুড়িভর্তি স্বপ্ন নিয়ে। সনাতন যখন মাটি দিয়ে প্রথম গরুর ছবি আঁকে, বাবা হেসে বলেন, “গরুটা কাঁদায় হাঁটছে, রে! তুই তো সত্যিই আঁকছিস!”  প্রথম স্কুলে যাওয়া হয় আট বছর বয়সে। হাতে ছেঁড়া খাতা, পকেটে পেন্সিল। শিক্ষকরা সনাতনের খাতায় অংক বা বাংলা না দেখে বিরক্ত হতেন।  “তুই তো সব পাতায় শুধু আঁকা আঁকিস! এভাবে কিছু হবে না।” কিন্তু তার একটা শিক্ষক ছিল—হরিপদ মাস্টার। সাদা ধুতি, পাতলা চশমা আর একরাশ মমতা নিয়ে বলতেন, “ওর খাতা না, ক্যানভাস। সময় এলে বুঝবি।” সনাতনের মনে সেই সময় ‘শিল্পী’ হওয়ার ইচ্ছেটা বীজের মত বপন হয়। ক...

🎨 রঙে রঙে অচিনপুর🎨 এক অচেনা চিত্রশিল্পীর গল্প - ডঃ অসিত কুমার মাইতি

Image
বাংলার এক কোণায়, যেখানে পাকা রাস্তা শেষ হয়ে ধুলোমাখা কাঁচা পথ শুরু হয়, সেই অজানা গ্রামটার নাম অচিনপুর। খুব বেশি কেউ চেনে না এই জায়গাটাকে — না কোনো মানচিত্রে, না কারো স্মৃতিতে। যেন একটা হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নের মতো, কুয়াশা ঢাকা ভোরে যার অস্তিত্ব বোঝা যায় শুধু তার নিঃশব্দ সৌন্দর্যে। সেই গ্রামে বাস করে রঘু, একজন চিত্রশিল্পী — যদিও সে নিজেকে কখনো “শিল্পী” বলে পরিচয় দেয় না। তার জন্য ছবি আঁকা মানে কোনো পেশা নয়, একধরনের প্রার্থনা।   তার বয়স এখন প্রায় চল্লিশ, কিন্তু চেহারায় একরকম সময়হীনতা রয়েছে। যেন তার চোখ দুটো বহু বছর ধরে দেখে চলেছে এমন কিছু যা আমরা কেউ দেখার সময় পাই না। রঘুর জন্মও এই গ্রামেই। বাবার ছিল একখানি ছোট পানের দোকান। সংসার খুব একটা সচ্ছল ছিল না। ছোটবেলাতেই মা হারান, আর বাবা কড়া হাতে মানুষ করতেন। বই-খাতা যতটা দরকার, তার বাইরে কিছু না।   তবে রঘুর মন তো বাঁধ মানত না — সে দুনিয়াটাকে দেখতে চাইত রঙে, আকারে, আলো-ছায়ায়।   মাটিতে কাঠকয়লা দিয়ে আঁকা তার প্রথম চিত্র — একটা গরুর গাড়ি, পাশে বসে থাকা ছোট্ট একটা ছেলে। বাবা দেখে বলেছিলেন, "এসব হাবিজাবি করলে পেটে ভাত জুটবে...

Indian Calendar: A Cultural and Historical Perspective

Image
Indian Calendar: A Cultural and Historical Perspective  By Dr. Asit Kumar Maity  Abstract   The Indian calendar is a complex lunisolar timekeeping system that has guided Indian society for millennia. This article provides an overview of its historical origins, regional adaptations, astronomical foundations, cultural significance, and relevance in contemporary India. Drawing from ancient scriptures, astronomical treatises, and modern academic sources, it highlights the Indian calendar as both a scientific achievement and a cultural cornerstone.  Introduction  The Indian calendar is one of the oldest and most intricate timekeeping systems in the world. It integrates both lunar and solar cycles, serving to track time, organize festivals, and coordinate agricultural and religious practices. The calendar’s origins can be traced back to the Rigveda , which states: “The year is divided into twelve months, and each month is divided into two fortnights” (Rigveda, 1...