বেপরোয়া - ডঃ অসিত কুমার মাইতি
এ মায়াবী দুনিয়াতে প্রতিনিয়তই চলছে এক আজব খেলা। খেলাঘরের এই রঙ্গমঞ্চে কেউ আসে তো কেউ চলে যায়। সে আপন হোক বা পর, তা কোনো ঘটনাই হোক বা জীবনের অধ্যায়। কালাম স্যারের একটি কথা মনে পড়ে গেল- 'নিজের ভাগ্য নিজেকেই তৈরী করতে হয়।'
অনেকের মুখে পূর্নজন্মের কথা শুনেছি তা নিয়ে অনেক চিন্তাভাবনা করার পর বুঝলাম এটা কোনো অলৌকিক কথা নয় বরং এটা বাস্তব। এই 'পূর্নজন্ম' শব্দটির মধ্যেই রয়েছে এর অর্থ আসলে আমরা যে কর্ম করি তার প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে যে ফলাফল পাই তাই হল পুনর্জন্ম। এর ব্যাখ্যা করা সহজ হলেও তা অনুধাবন করতে হলে আপনাকে একটা কাহিনী শুনতে হবে। আর দেরী না করে চলুন শুরু করি।
এক শিল্পীর সংসারটা আজ হঠাৎ ভেঙে গেল। শিল্পী আজ তিন বছর আগে মারা গেছেন। সংসারে শাশুড়ি ভাসুর-দেওরের গঞ্জনা আর অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে শ্যামলতা তার দুই পুত্র সন্তান নিয়ে অন্যত্র চলে যান এবং তিনি পুনরায় একটি বিবাহ করেন। কিন্তু বড় ছেলে অনিক তাদের সাথে যায়নি। শ্যামলতা তার ছোটপুত্র তিন বছরের অবিনাশ কে নিয়ে এক নতুন জীবন শুরু করে। এদিকে অনিক কে একা পেয়ে তার বাড়ির লোকজন সংসার থেকে ভাগ বাটোয়ারা করে দেয়। অনিক দু-এক জনের সহযোগীতায় নয় বছর বয়সে হোস্টেলে চলে যায়।
অন্যদিকে অবিনাশ অন্য বাড়িতে গিয়ে আসহায়ের মতোই বড় হতে থাকে। কখনো তাকে বারান্দায় কখনো মাটির মেঝেতে ঘুমাতে হয়। ঐ বাড়ির ছেলেদের পুরোনো নোংরা জামাকাপড় তার পুজোর পোষাক ছিল। শ্যামলতা তার বাড়ির আশ্রিতা তাই কখনো ছোট্ট অবিনাশের বায়নাগুলো পূরণ করতে পারেনি। কোনোমতে একটা বছর যেতেই শ্যামলতা অবিনাশকে একটি আর্য মিশনে ভর্তি করিয়ে দেয়। মা-বাবার স্নেহ-ভালোবাসা পেলনা অবিনাশ। বছরে এক থেকে দু বার তার সাথে দেখা করতে যেতেন শ্যামলতা। ওদিকে অবিনাশ দেখাশোনার। অভাবে খুব অল্প বয়স থেকেই নেশার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে তার চাওয়া-পাওয়া আর কাজকর্মগুলো বদ সঙ্গের দিকে এগোতে থাকে। অষ্টম শ্রেনী কোনোমতে পাশ করে একটা জামা-কাপড়ের দোকানে কাজ করতে চলে যায়। যদিও এটা সে তার অভাবে করেনি করেছিল তার নেশাটাকে টিকিয়ে রাখবার জন্য। সেখানে কাজের বদলে নেশা করে দিন কাটাতে থাকল। মালিক কিছুদিন সহ্য করল, বেতনের বদলে মাঝেমধ্যে কিছু কিছু টাকা নিয়ে বেতনের থেকে বেশি টাকা নিয়ে নেশাতে আসক্ত হতে থাকল। দূর্গাপুজোর সময় আনিকের কাছে চলে আসে। সেখানে তার পৈতিক সম্পত্তির ভাগ নিয়ে থাকতে চায়। আনিক কিছু না বলে না সে তার বাবার ভাগে পাওয়া চারটে রুমের মধ্যে দুটো খুলে দেয়।
অনিক উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে, চিত্রকলা নিয়ে মাস্টার্স পাশ করে নিজের এলাকায় ছবি আঁকার একটি স্কুল খুলে সেখানে এলাকার ছোটবাচ্চদের ছবি আঁকা শেখাত। অবিনাশ ওদিকে মালিকের টাকা শোধ না দিতে পারার জন্য মালিক বারবার তাগাদা দিলে অনিক মালিকের টাকা শোধ করে দেয়। অবিনাশ বাড়িতে থাকতে থাকতে এলাকার নানা নেশাবাজ ছেলেদের সাথে মেলামেশা শুরু করে দেয়। অনিক বাধা দিলে সবার সামনে তাকে অসম্মানজনক কথা বলে এমনকি বাড়ির বড়দেরও নানা অসম্মানজনক গালিগালাজ করে। বাড়িতে দিন দিন সে নানান অশান্তি করতে থাকে। একবছর বাড়িতে থাকার পর একটা ইলেকট্রনিক্স দোকানে কাজে যায়। সেখানেও তার পুনরাবৃত্তি ঘটে। দোকানের মালিকের থেকে অযথা টাকা নেওয়া, নেশা করে দেরীতে দোকানে যাওয়া, কাজেকর্মে লোকসান ঘটানো ইত্যাদি ইত্যাদি। সেখানেও বেশীদিন টেকেনি মাস দুই পর দোকানদার নেশা করতে বাধা দিতে সেখানেও কাজ আর হল না। বাড়িতে দু একদিন থাকবার পর পুনরায় একটি খাওয়ার দোকানে কাজে চলে যায়। সেখানেও কাজ কিছু দিন চললো তারপর বন্ধ। প্রতিবারের থেকে এবার একটু আলাদাভাবে, বাড়ির থেকে জামা-কাপড় গুছিয়ে অনিকে না জানিয়ে চলে যায়, অজানার সন্ধানে।
অবিনাশ কিন্তু জানতেই পারলো না কীভাবে নিজেই নিজের ধ্বংসকে আহ্বান করছে। অল্প বয়সেই বিভিন্ন নেশায় নেশাগ্রস্থ হয়ে সুস্থ-স্বাভাবিক মনোবৃত্তিকে নষ্ট করছে, অশালীন আচরণ এই সব মিলিয়ে একটা গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যাচ্ছে যেখান থেকে ফিরে আসার কোনো পথ নেই। আজ থেকে যেমন কর্ম করছে তার ফল তো তেমনই হবে, এখনকার সকল ছোটো বড় কাজগুলোর মাধ্যমে অবিনাশ তার ভবিষ্যত সৃষ্টি করছে।
কখনো এমন কিছুই করবেন না যেটা আপনার ভবিষ্যত নষ্ট করবে। অসৎ সঙ্গ, খারাপ আচরণ ত্যাগ করুন এবং নিজের ভবিষ্যত সুন্দর করার চেষ্টা করুন।
-::-
👍👍
ReplyDelete