অ ন্ত রা লে (৩য় খণ্ড) - ডঃ অসিত কুমার মাইতি

 

অ  ন্ত  রা  লে (প্রচ্ছদ - ডঃ অসিত কুমার মাইতি) 

                 সবার কলেজে ভর্তি হওয়ার তাড়া, ছুটোছুটি। অভিরাজ ভর্তি হল কাঞ্চিনগর ডে কলেজে আর তার পাশে কাঞ্চিনগর গার্লস কলেজে ভর্তি হল অপূর্বা। ঠিক কয়েকমাস পর একদিন দুজনের দেখা হল  কিন্তু বিশেষ কিছু বলার উপায় ছিল না। দুজনেই খুব ব্যস্ত ছিল। শুধু জেনেছিল দুজনেই কাঞ্চিনগরের কলেজে ভর্তি হয়েছে।

পরে জানল অপূর্বা ইংরেজী অনার্সে আর অভি রসায়ন অনার্সে। যাই হোক পরে আবারও একবার দেখা হলো দুজনের। দুজন পরস্পরের সাথে দেখা করে কিছুটা পথ হাঁটতে হাঁটতে কথাবার্তা করে নিজেদের বাসায় ফিরে যায়। এভাবেই কয়েকমাস চলল। অপূর্বা যেখানে ইংরেজী পড়তে আসত তার কিছুটা দূরে অভি নিজের ক্লাস শেষ করে অপূর্বার জন্য অপেক্ষা করত। সারাটাদিনের খানিকক্ষণ সময় মাএ অপূর্বার সাথে কাটাতে চাইতো অভি। এই আশা অপূর্বার থাকলেও একটা ভয় তাকে ধাওয়া করে বেড়াত, পাছে কেউ তাকে অভির সাথে দেখে ফেলে আর বাড়িতে জানিয়ে দেয়, তাহলে বাড়ির লোকজন রাগা-রাগি করবেন আবার হয়তো খারাপ ভাবতেও পারেন। এই ভয়ের কারণে অভির সাথে সেভাবে মেলামেশাটা গভীর হয়নি। তবে অভির একটা সুযোগ ছিল অপূর্বার সাথে কিছুক্ষন কাটানোর।

                 অভির দিদি কাছেই একটা মেষে ভাড়া নিয়ে থাকত। তাই অভি এই শেষ সুযোগটাকে হাতছাড়া করেনি। ছোট দিদিকে নানান ভাবে বুঝিয়ে তার ফোন থেকে অপূর্বাকে ফোন করে খানিকক্ষণ নিজেরা কথা বলত। এভাবেই চলছিল তাদের প্রেমের গোপন সময়। কলেজে তখনও একটা বছর শেষ হয়নি হঠাৎ একটা দুঃসংবাদ ছুটে এল অপূর্বার কাছে। তার বাবা আর নেই।

                  সুকুমার বিশ্বাস (অপূর্বার বাবা) একজন ব্যাবসাদার ছিলেন। দুই মেয়ে, স্ত্রীকে নিয়ে একটা ছোট্ট সংসার মোটামুটি বেশ ভালোই কাটতো। আজ তাঁর মৃত্যুতে একটা বড় সমস্যার সম্মুখীন হতে হল, সংসারের দায় - দায়িত্ব নিয়ে। এহেন মূহুর্তে অর্পূবার ছোট মামা জামাইবাবুর দোকান - পাট চালিয়ে বোন তার দুই মেয়ের সমস্ত দ্বায়িত্ব নেবে।

              এক মাস পর অর্পূবা ফিরে আসে তবে বেশি দিনের জন্য নয়। বাড়ির থেকে তাকে একটা বাড়তি চাপ দেওয়া হয়। বি. এস সি. নার্সিং পড়ার জন্য, শিক্ষিকা হওয়ার ইচ্ছাতে ভাটা পড়ে যায় অর্পূবার। যাইহোক অদৃষ্টের হয়তো এটাই ছিল। যাওয়ার বেলা বান্ধবী মোনালিসার হাতে একটা চিঠি দিয়ে যায় অভির উদ্দেশ্যে, দেখা করবার অবকাশ ছিল না। বাড়ির লোকজন এসেছিল ওকে নিয়ে যেতে। মোনালিসাও কথামত অর্পূবা চলে যাওয়ার পর দিন অভির সাথে দেখা করে চিঠিটা দেয়। অভি জিজ্ঞেস করল, " আসলো না কেন?"

"কাল মেদিনীপুর থেকে চলে গেছে, তোমার সব উত্তর চিঠিতে লেখা আছে পড়ে নেবে। আর হ্যাঁ একা একা পড়বে।" বলে মোনালিসা চলে গেল।

অভি চিঠিটা নিয়ে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে নানা রকম চিন্তা ভাবনা করতে করতে মেষে চলে আসে, দরজার খিলটা তুলে দিয়ে খুবই তাড়াতাড়ি বিছানায় বসে চিঠিটা খুলল;—

খুবই সংক্ষিপ্ত লেখা চিঠিতে

    প্রিয়তম,

               বাবার মৃত্যুর পর বাড়ির সমস্ত দায়িত্ব আমার ছোট মামা নিয়েছে। তারা চাইছে আমি নার্সিং পড়ি। বড় মামার হাত আছে কলকাতাতে, ওখানে আমি চলে যাচ্ছি। কেন জানি না তোমাকে শেষবার দেখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছিল। আর কখনো দেখা হবে কিনা জানি না। দেখা হলে তুমি চিনতে পারবে তো? ভালো থাকবে নিজের খেয়াল রেখো।

                                                     তোমার অপু

(চলবে...)

Comments

Popular posts from this blog

দীপ্তি-তিমির আলয় (পর্ব ১) - ডঃ অসিত কুমার মাইতি

গোধূলি - ডঃ অসিত কুমার মাইতি

🎨 রঙে রঙে অচিনপুর🎨 এক অচেনা চিত্রশিল্পীর গল্প - ডঃ অসিত কুমার মাইতি