অ ন্ত রা লে (৪র্থ খণ্ড) - ডঃ অসিত কুমার মাইতি
![]() |
অ ন্ত রা লে (প্রচ্ছদ - ডঃ অসিত কুমার মাইতি) |
অভি আর নিজের চোখের জলের স্রোতে বাঁধ দিতে
পারেনি। আজ বহুদিনের একটা সুপ্ত ভয় সত্যি হল। অপু চলে গেল তার থেকে অনেক দূরে বহু
চেষ্টা করেও অভি কোনোভাবেই অপূর্বা সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। অভি নিজেকে খাঁচার বদ্ধ
একটা পাখির মতো কয়েকটা দিন কাটিয়ে দিল। তারপর মনে মনে আশার একটা স্বপ্ন ছবি এঁকেছিল।
যেখানে তার প্রিয়া অপূর্বা আবারও ফিরে আসছে। নিজেকে ধীরে ধীরে শক্ত করে আজ কয়েকটা
বছর কাটিয়ে দিল অভি।
নিজস্ব পারদর্শীতায় খাড়া হয়ে, অভিরাজ বিশ্ববিদ্যালয়
অতিক্রম করেই একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করে দেয়। একদিন হঠাৎ
একটা বন্ধুর অসুস্থতার খবর পেয়ে ছুটে যায় কলকাতার এক নার্সিংহোমে, সেখানে বন্ধু অমিতের
সাথে দেখা করবার পর একজন নার্সকে জিজ্ঞেস করতে যায়, অমিতকে কবে ছেড়ে দেওয়া হবে। নার্সের
সামনে গিয়ে অভি আর কিছুই জিজ্ঞেস করতে পারেনি। শুধুই আনমনে হঠাৎ কী একটা ভাবছিল! নার্স যখন বলল তুমি অভি তো? কেমন আছো?
অভির ভাবনার ছেদ
পড়ল। বলল, "হ্যাঁ, হ্যাঁ"।
ওই নার্স আর কেউ নয়, সে অপূর্বা। আবারও
অপূর্বাকে ফিরে পেয়ে অভিরাজের মনে যেন এক অফুরন্ত আনন্দ চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসছিল।
অপূর্বাকে 'অপু' বলে ডাকত তাই সেই পুরনো সোনাকে আবারও সোনা করে তুলতে ডাকল 'অপু' বলেই।অপু
সংক্ষেপেই বলল," ভালো আছি " তুমি? অভিরাজ ধীর গলায় বলল, "তোমাকে ছাড়া
আমি কি ভালো থাকতে পারি"! হঠাৎ অপূর্বার ডাক এল, ডাক্তার বাবু অপারেশন হলে ডাকছেন।
অপূর্বা উঠে দাঁড়াল আর অভির পকেট থেকে একখানা কলম বের করে হাতটা ধরে তার যোগাযোগ নম্বর
লিখে দিল। যাওয়ার সময় বলল সাড়ে নয়টার পরে ফোন করবে। তার আগে ব্যস্ত থাকবো। এভাবেই
আবারও অভির সাথে অপূর্বার সাক্ষাত হলো। অভি তার এই খুশির সংবাদটা নিজের সমস্ত বন্ধুদের
বলল। সেদিকে অপূর্বা কিছুদিন পরে যখন পুরানো বন্ধু মোনালিসাকে জানাল, তখনই ঘটল বিপদ।
আবারও দূরে যাওয়া, ভালোবাসার অভিমান, ভুলবোঝা - বুঝি শুরু হল।
অপূর্বা নিজের মোবাইলের সিমকার্ড ফেলে দিল, যাতে
অভি আর যোগাযোগই না করতে পারে। এটা আর কিছুই না শুধু এক চিমটে 'হিংসুটে বিষ' যাকে সরল
ভাবে বলা যায় 'কথা'। মোনালিসা অপূর্বার খুব কাছের বান্ধবী তাই অপূর্বার সমস্ত ব্যাপারে
নজরদারি রাখত আর নানান শলাপরামর্শ দিত। আসল কথা এই যে অপূর্বার বাবা মারা যাওয়ার পর
তার মামা সমস্ত দ্বায়িত্ব নিলেও তার কিছুদিন পরে পরে সে নিজ স্বার্থের ঝুলিটা ভালো
ভাবেই ভরে নিয়েছিল। নিজের ভাই সমস্ত দ্বায়িত্ব নিয়েছে ভেবেই খুশি ছিলেন স্বপ্নরেখা
দেবী (অপূর্বার মা)। কিন্তু নিজেরই ভাইকে চিনতে ভুল করেছিল স্বপ্নরেখা দেবী। তিন বছর
খুব পরিশ্রমের করে নিবারণ (অপূর্বার মামা) বাবু দাদাবাবুর ব্যাবসাটিকে সুন্দর ভাবে
গড়ে প্রয়োজন মতো লাভ্যাংশ তুলল এবং পরে ইচ্ছে করেই একটা মিথ্যে অভিযোগ করে দোকান
বিক্রি করে দিল, আর দিদির সাথে সাথে সম্পর্ক ভাঙল। ভগবান অতটাও নিষ্ঠুর ছিল না, বিধাতা
এমন সময় ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। অবশ্য ওই সময় অপূর্বারও নার্সিং কোর্স শেষ হয় এবং কলকাতার
একটা নামী নার্সিংহোমে চাকরির ডাক আসে। সেখানে অপূর্বা মনোনীতও হয়। এরপরই তার পরিবারের
সমস্ত দ্বায়িত্ব পড়ে তার ওপর। বোনের পড়াশুনা, সংসারের সমস্ত খরচ।
মোনালিসা কখনোই চাইতো না যে, অপূর্বা সুখী
থাকুক। অভির সাথে আবারও অপূর্বার যোগাযোগের কথা যখনই শুনল, তার চোখতো ছানাবড়া হয়ে
গেল।এক রকম বিষ্ময়ের সাথে বলল, "তুই আমার সাথে আজই দেখা করিস। অনেক কথা বলার
আছে।"
অপূর্বা —'কেন কোনো
অসুবিধা আছে নাকি।'
"ফোনে সব বলা
যাবে না, আজ একটু আমার সাথে দেখা করিস, সাবধানে আসিস” বলে ফোনটা কাটল।
অপূর্বা নার্সিংহোমে ছুটি করে হাওড়াতে মোনা লিসার বাড়িতে এল।
অপূর্বাকে দেখে মোনালিসা চায়ের কাপে কফি নিয়ে এগিয়ে গেল বারান্দার দিকে, অপূর্বা এগিয়ে আসতেই তাকে কফি বাড়িয়ে দিল। কফিতে চুমুক দিতে দিতে মোনালিসা মেকিতার সুরে বলল, আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো?
—না, না কোনো অসুবিধা হয়নি।
—হ্যাঁ, তবে কেন ডেকেছি শোন, দেখ অপু তোর সাথে অনেকদিন অভির কোনো যোগাযোগ নেই। জানিস না ও ঠিক কতটা বদলে গেছে। আমরা ছিলাম ; দেখেছি। যতদিন ওখানে ছিলি ওখানে, জানতাম ছেলেটা ভদ্র কোনো নেশাভান করে না ইত্যাদি, ইত্যাদি। আমি বহুবার ওকে আমার সামনে
সিগারেট খেতে দেখেছি। দু- একবার নাইট ক্লাবেও গিয়েছে। আর এমন ছেলেকে তুই আবারও ফিরিয়ে নিবি।
—দেখ আমি তো যা দেখেছি তাই বললাম বাকীটা তোর মর্জি। পরে কিন্তু বলতে পারবি না যে আমি কিছুই জানাই নি।
কথাগুলো শেষ হতেই কাপটা টেবিলে রেখে। ক্ষানিকক্ষণ চুপ করে
সোফাতে বসেছিল, তারপর মোবাইল থেকে সিমকার্ড খুলে ভেঙে ফেলল। মোনলিসা
দূরে দাঁড়িয়ে সব দেখল, মুচকি হেসে অপূর্বার কাছে আসতেই অপূর্বা
মোনলিসা কে ধরে হাঁউমাঁউ করে কেঁদে কেঁদে বলল— আমাকেই কেন সবাই এভাবে ঠকিয়ে চলে যায়। বাবার পর যাকে বেশি বিশ্বাস
করলাম শেষ পর্যন্ত সে ও…
আর বলতে পারল না।
(চলবে...)
Nice 👍
ReplyDelete