Posts

Showing posts from May, 2025

দীপ্তি-তিমির আলয় (পর্ব ৬) - ডঃ অসিত কুমার মাইতি

Image
  পর্ব ৬: জীবনের চিরন্তন পথ     দীপ্তি-তিমির আলয় এখন আর একটি ছোট্ট স্কুল নয়। ধনীবাঁধ গ্রামের এক কোণে, যেখানে আগে শুধুমাত্র পাথরের গন্ধ আর মাটির কণা ছিল, সেখানে আজ হালকা রোদে ভরে গেছে। সনাতন ঘোষের স্কুল এখন আঞ্চলিক পুরস্কার পাচ্ছে, শহর জুড়ে তার ছাত্রদের ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে। কিন্তু সনাতন জানে, এই সাফল্য আর বাহবা তার একার নয়—এটা তার ছাত্রদের, তাদের পরিবার, আর গ্রামের অব্যক্ত প্রার্থনার ফল।   তবে সনাতন কখনো খুব বড়ো কিছু চায়নি। সে চেয়েছিল তার ছাত্ররা বুঝুক—শিল্প শুধু একটি প্রক্রিয়া নয়, এটা জীবনের এক বিশেষ ভাষা। সেদিন যখন তার ছাত্ররা স্কুলের নতুন কাঠামো দেখতে পায়, তার চোখে সেই একই দীপ্তি, সেই একই ঝলমলে আশার আভা ছিল, যা কখনো মাটির পথে শুরু হয়েছিল।    সত্যিকারের পরিণতি     এখন, ধনীবাঁধ গ্রামের চেহারা বদলে গেছে। আগের সেই ক্ষুদ্র একাডেমিক স্কুলটি শহরের বড় বড় কলেজের সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করছে। এখানে শিল্পের শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মশালা, আলোচনা সভা, সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সনাতন ঘোষ, যিনি একদিন শুধুমাত্র একজন গৃহশিক্ষক ছিলেন, আজ তাঁর স্কুল হয়ে উঠেছে সমাজে আলো...

দীপ্তি-তিমির আলয় (পর্ব ৫) - ডঃ অসিত কুমার মাইতি

Image
পর্ব ৫ : নতুন দিগন্তে দীপ্তি   একবার শহর দেখে, সনাতন আবার গ্রামে ফিরে আসলে, তাঁর মধ্যে একটা অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। শহরের আলো, বড় বড় শহরের প্রদর্শনী, প্রচুর প্রশংসা—এই সব কিছুই তাকে ভাবতে শেখায়। কিন্তু সত্যি বলতে, সে জানত যে, গ্রামের মাটির সাথে তার সম্পর্ক অনেক গভীর। সেখানেই তার মূল শক্তি, তার শক্তি ছিল তার ছাত্রদের মাঝে।   যতদিন সে শহরে ছিল, ততদিন তার মনে গভীর ভাবে একটা প্রশ্ন উকি দিয়ে যাচ্ছিল— “কীভাবে আমি আমার স্কুলটাকে আরও বড়ো করে তুলতে পারি?”   ধনীবাঁধে ফিরে, সনাতন তখন থেকেই তার নতুন পরিকল্পনা আঁটতে শুরু করল। সবচেয়ে প্রথম কাজ ছিল— স্কুলের নামের পরিবর্তন। “দীপ্তি-তিমির আলয়” তার মনের কাছে এক বিশেষ অর্থ নিয়ে এসেছিল। তার ছাত্রদের মাঝে যে আশার আলো ছিল, সেটাই সবার কাছে পৌঁছাতে হবে। এত দিন ধরে গ্রামের সীমানার মধ্যে সে যেটি প্রতিষ্ঠিত করেছে, তা এবার আরও বেশি মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে হবে। নতুন পথের শুরু একদিন দুপুরে, সনাতন তার ছাত্রদের বলল—  “আমরা এবার আমাদের স্কুলটাকে অন্য এক জায়গায় নিয়ে যাব। এটা আর শুধু আঁকার স্কুল নয়, আমাদের শিক্ষা হবে এক নতুন পথের আলো। এখানে শু...

দীপ্তি-তিমির আলয় (পর্ব ৪) - ডঃ অসিত কুমার মাইতি

Image
পর্ব ৪: শহরের পথে, গ্রামের আলো হাতে     গভীর চট্টোপাধ্যায়ের ফোনের পর সনাতন একদম নিশ্চিন্ত ছিল না। প্রথমবার শহরে, প্রদর্শনী, অচেনা লোকেরা—সব কিছুতেই একটা অস্বস্তি ছিল। একদিকে সে এতদিন গ্রামের আলো আঁকতে দেখেছে, অথচ আজ সেই আলো শহরের গাঢ় অন্ধকারে পড়বে কী? কিন্তু তিনি জানতেন, এ সুযোগ ছাড়া কখনোই বুঝতে পারবে না তার কাজ কোথায় গিয়ে থামে।    যত দিন গেছে, ততই সেই প্রদর্শনীর তারিখের কাছে পৌঁছে আসছিল। সনাতন তার ছাত্রদের সঙ্গে একেবারে অন্যরকম এক উদ্দীপনা নিয়ে কাজ করছিল। যে শিল্পীরা কখনো নিজেদের ছবি একসঙ্গে এঁকেও দেখেনি, তারা এখন একে অপরের ছবিতে নতুন করে প্রাণ দিচ্ছিল।  “আমরা দেখাবো কীভাবে একে অপরকে আলো দেয়। একে অপরকে আঁকে।”      শহরে প্রথম পদার্পণ   পরদিনই সনাতন তার ছাত্রদের নিয়ে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিলেন। গ্রামের ছেলেমেয়েরা একেবারে নতুন শহরের পরিবেশে, তাদের চোখে কৌতূহল আর উত্তেজনা। শহরটা ছিল বিশাল, যেন এক বিরাট দানব—ভিড়, গাড়ি, বিলবোর্ড—সব কিছুতেই অচেনা।  “এই শহরকে কি আমার ছবি দেখে চিনতে পারব?” সনাতন মনে মনে ভাবছিল।  তবে যখন তা...

দীপ্তি-তিমির আলয় (পর্ব ৩) - ডঃ অসিত কুমার মাইতি

Image
  পর্ব ৩: দেয়ালে দেয়ালে আলো আঁকা দিন   ধনীবাঁধ গ্রামে বসন্ত মানেই হালকা বাতাস আর কুসুমে ভরা গাছ। এমন এক বিকেলে, সনাতন তার ক্লাস শেষ করে যখন উঠছিল, এক মা এসে বললেন, “স্যার, পুজোর সময় না হয় মণ্ডপে কিছু আঁকিয়ে দেবেন? আপনি আর আপনার ছেলেমেয়েরা?” সনাতন অবাক। এতদিন যে আঁকা ছিল উঠোনের কোণায়, সেটা এবার গ্রামের দুর্গাপুজোর মূল মণ্ডপে?   সে একটুও না ভাবেই রাজি হয়। পরদিন থেকেই শুরু হয় প্রস্তুতি। কুড়িজন ছাত্রছাত্রী, সাদা রঙের বালতি, পুরনো তুলির ঝুড়ি, আর দেয়াল—এ যেন এক বিশাল ক্যানভাস। ছবির থিম ছিল “আলোকের আহ্বান”। একদিকে কুমোরের চাকা ঘোরে, মাটির মা আসেন। অন্যদিকে একজন বালক রাতের আকাশে হাতে প্রদীপ ধরে হাঁটে। ছবির মাঝখানে — “দীপ্তি-তিমির আলয়” লেখা কালো কালি দিয়ে। মানুষ প্রথমে অবাক, পরে মুগ্ধ।   পুজোর সন্ধ্যায় এক বৃদ্ধ পণ্ডিত এসে বলেন, “ছবি দেখে মনে হয়, মাটির মধ্যে থেকেও আলো জ্বলে।   প্রথম প্রদর্শনী, প্রথম দুঃখ সেই বছরই জেলা থেকে একটি NGO আয়োজিত ‘শিশু শিল্প প্রদর্শনী’-র খবর আসে। সনাতন নিজের ছাত্র জিতু, মল্লিকা, আর এক প্রতিবন্ধী বালিকা বর্ণালী-র ছবি পাঠান...