আস্থা - ডঃ অসিত কুমার মাইতি (৫ম পর্ব)

 


অধ্যায় ৫: শিবের রূপান্তর

ভীমডাঙা গ্রামে আজ এক অন্যরকম রাত। বাতাস নিঃশব্দ, চাঁদের আলো যেন হালকা নীলচে, আর শিবমন্দিরের পাশের পুরনো বটগাছের পাতাগুলো কাঁপছে না—একটা অতিপ্রাকৃত স্থিরতা।

আদিত্য জানে, কিছু একটা ঘটতে চলেছে।

"সত্য, প্রেম আর বিশ্বাস—এই তিনের মধ্যে দিয়ে এখন তার পরীক্ষা হবে।”

শিবমূর্তির রূপান্তর

মন্দিরের ভিতরে আজ শিবমূর্তি যেন ঠিক আগের মতো নেই।

মূর্তির তিলক, চক্ষু, গলার নাগ ও ত্রিশূল থেকে এক অদ্ভুত দীপ্তি নির্গত হচ্ছে।

গ্রামের পুরোহিতেরা ভয় পেয়ে বলে উঠল— “এ শিব নয়, এ রুদ্রের রূপ... ভগবানের রাগী প্রকাশ!”

সেই মুহূর্তে মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ করে আদিত্য, হাতে পাণ্ডুলিপি আর গলায় রুদ্রাক্ষ। সঙ্গে সুরভি ও ঋষিও। তিনজনের চোখে ভয় নেই, বরং একধরনের আত্মবিশ্বাস।

মূর্তির দিকে তাকিয়ে আদিত্য বলে—“যদি আমি সৎ থাকি, তবে তুমি আমার প্রার্থনায় মুখ দেবে—নইলে নীরব থেকো।”

ঠিক তখনই, মূর্তির কপালে এক বিন্দু আলো জ্বলে উঠল।

 

অলৌকিক শক্তির উন্মোচন

ভেতরের অন্ধকার যেন ধীরে ধীরে নীলাভ হয়ে উঠল। এক অদৃশ্য কণ্ঠস্বর শুনতে পাওয়া গেল— “তোমরা প্রেমে বিশ্বাস করেছ, ত্যাগে আগুন দিয়েছ, এখন পুরস্কার তোমার হাতে।”

শিবমূর্তির পায়ের কাছে খুলে গেল এক গুপ্তদ্বার—যেখানে রাখা ছিল একটি কঞ্চির দণ্ড, ত্রিশূলের খণ্ডাংশ ও একটি আগুনে লেখা মন্ত্র।

এই তিনটি বস্তু হলো—

1. বিচারের প্রতীক

2. শক্তির প্রতীক

3. ভক্তির প্রতীক

ঋষি চোখে জল নিয়ে বলল— “এটাই আমাদের উত্তরাধিকার।”

প্রেমের চূড়ান্ত পরীক্ষা

ঠিক তখনই, সুরভি হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল। বলল—“আমি চাই না শুধু ঈশ্বরের আশীর্বাদ… আমি চাই আদিত্যর প্রেমও আবার ফিরে আসুক। যদি ও এখনো ভালোবাসে…”

আদিত্য এগিয়ে গিয়ে বলল—“আমার প্রেম কখনো যায়নি, সুরভি। ও শুধু পরীক্ষা দিচ্ছিল… আজ ঈশ্বর পাশ করিয়েছেন।”

-       “চলো, এবার আমরা একসাথে হই—প্রেমে, ভক্তিতে, আর জীবনে।”

দু’জনের কপালে তখন শিবমূর্তির থেকে আলো এসে পড়ল।

গ্রামজুড়ে উৎসব শুরু হয়। মন্দিরের নিত্যপূজা নতুনভাবে শুরু হয়।

আদিত্য আবার স্কুলে ফিরে যায়, এইবার চোখে শান্তি আর হৃদয়ে পূর্ণতা নিয়ে।

 

গ্রামবাসীরা বলে—

 “এই শিক্ষকের জীবনই এখন আমাদের জন্য উপদেশ… প্রেম, সংগ্রাম আর ঈশ্বর—সবই একসূত্রে বাঁধা।” আসলে ‘যার হৃদয়ে ঈশ্বরের জন্য প্রেম থাকে, তার প্রেমকেও ঈশ্বর ফেরায়।’

সুরভি বলল,- “আমি ভেবেছিলাম, প্রেম আমাদের বাঁচাবে। কিন্তু ঈশ্বর আমাকে শিখিয়েছেন, বাঁচাতে হলে নিজেকে পোড়াতে হয়।”

 

মন্দিরের গুপ্তধন

আদিত্য বুঝল, মন্দিরের নিচে রয়েছে এক গোপন কক্ষ, যেখানে লুকানো আছে পুরনো শাস্ত্র ও গুপ্তধন। এই গুপ্তধন শুধু ধন নয়, এক ধরনের জ্ঞান যা শিবের প্রেম ও শক্তির প্রতীক।

ঋষি হঠাৎ হাজির হয়ে বলল—“এই গুপ্তধনের সন্ধান তোমার জন্য নয়, আদিত্য। তুমি কি প্রস্তুত?”

রাত গভীর। আদিত্য মন্দিরের সেই গোপন পথের দিকে পা বাড়াল। পিছনে সুরভি ও ঋষি।

তার হৃদয় ধক ধক করে উঠল—“এখন শুরু হয়েছে সত্যের যুদ্ধ।”

 

 

(চলবে…)

Comments

Popular posts from this blog

দীপ্তি-তিমির আলয় (পর্ব ১) - ডঃ অসিত কুমার মাইতি

গোধূলি - ডঃ অসিত কুমার মাইতি

🎨 রঙে রঙে অচিনপুর🎨 এক অচেনা চিত্রশিল্পীর গল্প - ডঃ অসিত কুমার মাইতি